| প্রকাশিত হয়েছেঃ June 20, 2020 | টিউন বিভাগঃ

প্রিয় অঞ্জন,
       জীবনের বেলাশেষে বেলা বোসের উত্তর পেয়ে কী খুব অবাক হয়ে গেলে? ম্লান হওয়া স্মৃতিদের মধ্যে থেকে কী জীবনের কোনো এক অধ্যায় চোখের সামনে ভেসে উঠল? কী ভাবছ সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে বেলা বোস হঠাৎ কেন তোমায় চিঠি লিখতে বসেছে? আসলে তোমার মুখমুখি হওয়ার মতো কোনো সাহস নেই এই মধ্যবয়সী বেলার জীবনের অনেকগুলো বসন্ত পেরিয়ে তোমার বেলা আজ পৌঢ়া, বেশ কিছু রূপালী চুলের অধিকারী

আচ্ছা অঞ্জন, আমি কী আজও তোমার কাছে সেই বছর কুড়ির তন্বী, যে কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে রাস্তার কিছু সস্তা হোটেলের বদ্ধ কেবিনে বসে স্বপ্ন সাজাতে ভালোবাসত চুড়িদার পরা লম্বা বেনীর সেই মেয়েটা যে তোমার অপলক দৃষ্টিতে শিহরিত হত যার চুলের সুবাসে তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুভূতিরা জাগত সেই দীঘল চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে পাতার পর পাতা কবিতা লিখতে পারতে তুমি আর তোমার বর্ণনায় আমি খুঁজে পেতাম এক পরিপূর্ণ আমিকে তুমি এখন আর কবিতা লেখো আমায় নিয়ে? না কি সেই জায়গাটা এখন নতুন কেউ দখল করেছে?

তুমি আর কারনে-অকারনে কসবায় ছুটে যাও? জানো আমাদের কসবার সেই নীল দেওয়ালের বাড়িটা আজ এক মস্ত বড় ফ্ল্যাটে রূপান্তরিত হয়েছে ঠিক যেভাবে আমাদের রঙিন স্বপ্নগুলো ফিকে হয়ে গেছিল কিছু মিথ্যের ভিড়ে অর্থের জাড়িজুড়ির নীচে আমাদের লাল-নীল সংসারের স্বপ্নগুলোর অপমৃত্যু ঘটেছিল

তোমার কী মিথ্যে বলার স্বভাবটা এখনো আছে? কেন মিথ্যে করে বলেছিলে তুমি চাকরি পেয়েছ? অঞ্জন ঘুস দেওয়ার সামর্থ্য যে তোমার নেই তা কী ভুলে গেছিলে? তোমার চাকরির অপেক্ষা তো অনেকদিন করেছিলাম কিন্তু আমাদের সময় বছর কুড়ির একজন মেয়েকে ঘরে বসিয়ে রেখে যে কোনো বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারের মা-বাবার রাতের ঘুমটা ঠিক মতো হত না গো তাই পরিবারের চাপেই তোমার বেলা বোসের হাতটা অন্যকারো বজ্রমুষ্ঠী অধিকার করেছিল ডাক্তার পাত্রের কাড়িকাড়ি টাকার বিনিময়ে আমার স্বত্তা বিক্রি হয়েছিল বিয়ের খবরটা তোমায় জানানোর অনেক চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তখন তুমি চাকরির চেষ্টায় এতটাই ব্যস্ত যে আমার খোঁজ নেওয়ার একটু সময়ও পাওনি সেদিন কোথায় ছিলে তুমি? অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে তুমি যখন টেলিফোন করলে তখন তোমার বেলা তিন বছরের কন্যা সন্তানের মা তুমি টেলিফোনটা করতে যে বড্ড বেশী দেরি করে ফেলেছিলে, আমার ফেরার সমস্ত রাস্তা যে অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছিল ফোনের ওপারে তোমার আকুল আর্তির উত্তরে আমার বহুদিনের জমে থাকা নিরব কান্নারা নেমে এসেছিল দুগাল বেয়ে তোমার ওই টেলিফোন আমাদের এই পুরুষশাসিত সমাজ আমাকে কলঙ্কিনী আখ্যা দিয়েছিল নিজের স্বামীর চোখে প্রথমবার অবিশ্বাসের ছায়া দেখেছিলাম তার মনে ভিড় করেছিল হাজারো প্রশ্নেরা অনেক পরীক্ষা দেওয়ার পরও তার ঠুনকো বিশ্বাস আমি আর অর্জন করতে পারিনি আমাদের সম্পর্কে একটা অভেদ্য দেওয়াল সৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু ওই মানুষটা একদিনের জন্যও নিজের কর্তব্য ভুলে যায়নি



জানো অঞ্জন তোমার বেলা আজ বড়ো গাড়ি-বাড়ির মালকিন হয়েছে নিজেকে আগা-গোড়া সোনা-রূপায় মুড়িয়ে মুখে কৃত্রিম হাসি এনে আমি আজ ভীষন সুখী কিন্তু আমার এতো সুখের ভিড়েও মনের কোন এক গোপন কোনে তুমি একই রকমভাবে কেন সক্রিয় আছে? অঞ্জন দত্ত তোমার স্পর্শদের বেলা বোস আজও বাক্স বন্দী করে রেখেছে হৃদয়ের এক নিষিদ্ধ কুঠুরিতে কোন এক মনখারাপের দুপুরে বা নির্ঘুম একাকীত্বের রাতে তোমার স্মৃতিরা ঘিরে ধরে আমায় কঠিন বাস্তবের সঙ্গে লড়াই করতে করতে যখন বারবার বেলা বোস অসফল হয় ওরা তখন বাঁচার রসদ যোগান দেয় জানো আজকাল আমি বড্ড লোভী হয়েছি, তোমার সাথে লাল-নীল সংসার বাঁধার খুব লোভ হয় আমার জীবনের শেষ কটা দিন তোমার সাথে কাটানো স্বর্ণালী মুহূর্তের স্মৃতিরা আমাকে নতুন করে ভালো থাকতে শেখায় তোমার বেলাকে মারনরোগে ধরেছে আমার স্বপ্নভরা দুচোখ বেয়ে ঘুমেরা নামছে তোমার সব অভিমান সব অভিযোগের ঊর্ধ্বে গিয়ে চিরমুক্তি পাব আমি অঞ্জন তুমি আর কেঁদোনা ফেলে আসা দিনগুলো কখনই একেবারে শেষ হয়ে যায় না, সুখী  মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থেকে দুঃসময় বাঁচাতে শেখায় অঞ্জন তুমি আর ফোন করোনা, ২৪৪১১৩৯ বেলা বোস আর রেসপন্স করবে না

ইতি-
অঞ্জন দত্তের বেলা বোস



Previous
Next Post »

মৃত্যু ও কবরের আযাব

  Privacy Policy Villegecreator built the   মৃত্যু ও কবরের আযাব app as a Free app. This SERVICE is provided by Villegecreator at no cost and...

Design by MS Design

Powered by Blogger